পেনসিলভানিয়া, ১৭ অক্টোবর, ২০২৫ | ২ কার্তিক, ১৪৩২

সর্বশেষ:
‘আমরা তাওয়া গরম করছি’ আমি নিজেই পিআর বুঝি না: মির্জা ফখরুল তার ওপর হামলা ছিল ‘টেস্ট কেস’: নুর SS ডেলি এন্ড গ্রোসারি আপার ডার্বিতে বাংলাদেশিদের প্রতিষ্ঠান ফিলাডেলফিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘লোক উৎসব ২০২৫’: প্রবাসে বাঙালিয়ানার উজ্জ্বল প্রকাশ পেনসিলভেনিয়ায় আল-আকসা সুপারমার্কেটের উদ্বোধন ২৩ অক্টোবর ইলিয়াস কাঞ্চনকে নিয়ে ডিপজলের আবেগঘন পোস্ট ৫ কারণে দাম বাড়ছে স্বর্ণের পাঁচ শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে এনসিপির লংমার্চ উপদেষ্টাদের ‘সেফ এক্সিটের’ পথ দেখালেন আখতার জামায়াতের সঙ্গে জোট বা সমঝোতা করবে না বিএনপি নারীদের জন্য তারেক রহমানের ৬ অঙ্গীকার এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে নিয়ে জনগণ গর্বিত থাকতে চায়: জামায়াত আমির রাজধানীতে আ. লীগের ৭ নেতাকর্মী গ্রেফতার

নিউ ইয়র্কে রাজনীতিবিদদের হেনস্তার দায় স্থায়ী মিশনের

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৩:০৮ এএম, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

নিউ ইয়র্কে রাজনৈতিক নেতাদের ওপর হামলার ঘটনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দায়ী করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ মিশন রাষ্ট্রের সম্মানিত অতিথিদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

ঘটনায় মিশনের মিনিস্টার এমদাদুল ইসলাম চৌধুরী, সফরে প্রটোকলের দায়িত্বে থাকা নাজমুল হক ও শোয়েব আবদুল্লাহ দায়ী বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। পররাষ্ট্র ক্যাডারের এই তিন কর্মকর্তা নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগী বলে জানা গেছে।

এদিকে রাজনীতিকদের হেনস্তার পেছনে সরকারের দুজন উপদেষ্টার ব্যক্তিগত রেষারেষির বিষয়টিও সামনে চলে এসেছে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছালে জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে হামলার শিকার হন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। এ সময় সফরসঙ্গী বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও এনসিপির নেত্রী তানসিম জারাকেও হেনস্তা করা হয়। তাদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। পেছন দিক থেকে আখতারের ওপর ডিম ছোড়া হয়।


এমন পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থ হওয়ার বিষয়টি সামনে এসেছে। কারণ, পাশাপাশি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন ঘিরে সদস্য রাষ্ট্রের সরকারপ্রধানরা এ সময় নিউ ইয়র্কে অবস্থান করেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নিরাপত্তাব্যবস্থা দেখে কেউ কেউ হতাশাও প্রকাশ করেছেন।


জানা গেছে, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এমদাদুল ইসলাম চৌধুরীকে সফরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার আমলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালকের দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বদলি হয়ে তড়িঘড়ি করে নিউ ইয়র্ক চলে যান। তাকে এই সফরে প্রটোকলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বর্তমানে কাঠমান্ডু মিশনে কর্মরত সোয়েব আবদুল্লাহকেও নিউ ইয়র্ক নেওয়া হয়েছে প্রটোকলের দায়িত্ব দিয়ে।


অভিযোগ রয়েছে, এই তিন কর্মকর্তা এখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করছেন। এই সূত্র ধরে তারা ডেলিগেটদের বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার তথ্যসহ যাবতীয় কর্মসূচি পাচার করেছেন। এই সুযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বিমানবন্দরের নির্ধারিত গেটে গিয়ে সিনিয়র নেতাদের হেনস্তা করার দুঃসাহস দেখিয়েছে।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীদের ‘যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিরোধ’ আগাম ঘোষণা দিয়ে বিমানবন্দরে অবস্থান নিয়েছিল বাংলাদেশে কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। দলটির এই কর্মসূচির বিষয়টি সরকার আগে থেকেই জানত। তবে সে অনুযায়ী নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নিরাপত্তায় কী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কী নির্দেশনা গেছেÑসে প্রশ্নও উঠেছে।


এদিকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য আওয়ামী লীগকে উসকে দেওয়া হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযোগ উঠেছে। প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘ সফর উপলক্ষে গত ১৭ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বিক্ষোভ হবেÑএটা কিন্তু আমি ধরে নিচ্ছি। কারণ, এটা ঠেকানোর উপায় আমাদের নেই, তাদেরও নেই। তিনি বলেন, ‘পশ্চিমের দেশগুলোতে বাধা দেওয়া, স্লোগান দেওয়া, রাস্তায় মিছিল করা, প্রতিবাদ করার রাস্তা আটকানোর কোনো উপায় কারোরই নেই। আমরা চাই শুধু ডেলিগেশন দলের নিরাপত্তা যেন সঠিক থাকে। আশা করছি কোনো অপ্রীতিকর কিছু হবে না।’


সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক কনসাল জেনারেলের কার্যালয়ে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর হামলার বিষয়টি উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা বলেন, মাত্র এক মাস আগে সেখানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা একটি অঘটন ঘটিয়েছে। সে বিষয়টি মাথায় রেখে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সঙ্গে আরো নিবিড়ভাবে কাজ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। নিরাপত্তা জোরদার হলে আজকের এই পরিস্থিতি এড়ানো যেত।


এদিকে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। নিউ ইয়র্ক থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে বলা হয়, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, এনসিপি নেতা আখতার হোসেন ও তাসনিম জারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পরিকল্পিত হামলার শিকার হয়েছেন।


সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, এই সফরে প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গী রাজনৈতিক নেতাদের সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি আঁচ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একাধিক পূর্বসতর্কতামূলক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সমন্বয় করেছিল। বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর প্রতিনিধিদলকে নির্দিষ্ট ভিভিআইপি গেট দিয়ে নিয়ে সুরক্ষিত পরিবহন ইউনিটে ওঠানো হয়। তবে অপ্রত্যাশিত ও শেষ মুহূর্তের ভিসা-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে প্রতিনিধিদলকে বিকল্প নির্গমন পথ দিয়ে বের হতে হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে রাজনৈতিক নেতাদের জন্য ভিভিআইপি প্রবেশাধিকার ও নিরাপত্তা সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করা হলেও দুঃখজনকভাবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তা প্রত্যাখ্যান করে। এর ফলে প্রতিনিধিদলের ওইসব সদস্য ঝুঁকির মুখে পড়েন।


রাজনৈতিক নেতারা হেনস্তার শিকার হওয়ার ক্ষেত্রে দলগুলোর নেতাকর্মীদেরও ব্যর্থতার বিষয়টি সামনে আসছে। প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে বিএনপি মহাসচিবের যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার বিষয়টি সেখানকার বিএনপি আগে থেকেই অবহিত ছিল। সে অনুযায়ী তারা বিমানবন্দরের সামনে অবস্থানেরও ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু দলটির উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতাকর্মীকে বিমানবন্দরে চোখে পড়েনি বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। তাছাড়া বিএনপি মহাসচিব কোন গেট দিয়ে বের হবেন, সে বিষয়ও অবগত ছিলেন না বিএনপি নেতাকর্মীরা। ছাত্রদের নতুন দল এনসিপিরও খুব বেশি নেতাকর্মীকে দেখা যায়নি।


অন্যদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতাকর্মী তাদের নেতা ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরকে কর্ডন করে নিরাপদে বিমানবন্দর থেকে বের করে নিয়ে যান। বিমানবন্দরে উপস্থিত জামায়াতে ইসলামীর একাধিক কর্মী আমার দেশকে বলেছেন, তারা বিএনপি ও এনসিপি নেতাদের তাদের (জামায়াতের) ব্যারিকেডে বেরিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তারা খুব একটা গুরুত্ব দেননি। তারপরও তাদের কয়েকজন কর্মী মির্জা ফখরুলকে যতটা সম্ভব নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।


এদিকে ঘটনার পূর্ণ তদন্ত করে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও অবিলম্বে পদত্যাগ করার দাবি জানিয়েছে এনসিপি। দলটি বলেছে, ফ্যাসিবাদের জমানায় নিয়োগ করা আওয়ামী লীগের দোসরদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অপসারণ করতে হবে।


সরকারের অদক্ষতাকে দায়ী করে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, সরকারের প্রতি সব গণতান্ত্রিক শক্তি সমর্থন জানিয়েছে। সরকার যদি আরো দক্ষতা প্রদর্শন করত, তাহলে নিউ ইয়র্কে এ ঘটনা ঘটত না এবং ফ্যাসিবাদের দোসররাও এই কর্মকাণ্ড করতে সাহস দেখাতো না।


জাতিসংঘ সফরে থাকা প্রধান উপদেষ্টার একাধিক প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নিরাপত্তাব্যবস্থা তাদের কাছে কিছুটা ঢিলেঢালা মনে হয়েছে।


এ ঘটনার পেছনে সরকারের দুজন উপদেষ্টার ব্যক্তিগত রেষারেষির বিষয়টিও সামনে চলে এসেছে। সরকারের ভেতর থেকেই ওই দুই উপদেষ্টাকে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করা হচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, জাতিসংঘ সফরে রাজনীতিবিদদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত ছিল না। সফর চূড়ান্ত করার শেষদিকেই তাদের অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত আসে। রাজনীতিবিদদের সফরসঙ্গী হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান ভূমিকা রাখেন।


রাজনীতিবিদদের সফরসঙ্গী করা হলে তাদের সম্মানিত করার পাশাপাশি দীর্ঘ সফরে সরকারের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আরো ঘনিষ্ঠ হবে। তিন দলের নেতাদের নিজেদের মধ্যেও বোঝাপড়া বাড়বে। এতে করে সংস্কার কার্যক্রম তথা জুলাই সনদ নিয়ে যে অনিশ্চয়তা ও সংকট তৈরি হয়েছে, তা কেটে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। এ জন্য তিনি সরকারের শীর্ষ পর্যায়কে বিষয়টি বোঝাতে সক্ষম হন। এ কারণে অনেকটা শেষ মুহূর্তে তাদের অন্তর্ভুক্ত করে ভিসা করানোসহ যাবতীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়।


অন্যদিকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের রাজনীতিবিদদের সফরে অন্তর্ভুক্ত করার কোনো ইচ্ছে ছিল না বলে জানা গেছে।

মন্তব্যঃ

দুঃখিত, কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি!

নতুন মন্তব্য করুন:

ad
সকল খবর জানতে ক্লিক করুন
ad