পেনসিলভানিয়া, ১৭ অক্টোবর, ২০২৫ | ২ কার্তিক, ১৪৩২

সর্বশেষ:
‘আমরা তাওয়া গরম করছি’ আমি নিজেই পিআর বুঝি না: মির্জা ফখরুল তার ওপর হামলা ছিল ‘টেস্ট কেস’: নুর SS ডেলি এন্ড গ্রোসারি আপার ডার্বিতে বাংলাদেশিদের প্রতিষ্ঠান ফিলাডেলফিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘লোক উৎসব ২০২৫’: প্রবাসে বাঙালিয়ানার উজ্জ্বল প্রকাশ পেনসিলভেনিয়ায় আল-আকসা সুপারমার্কেটের উদ্বোধন ২৩ অক্টোবর ইলিয়াস কাঞ্চনকে নিয়ে ডিপজলের আবেগঘন পোস্ট ৫ কারণে দাম বাড়ছে স্বর্ণের পাঁচ শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে এনসিপির লংমার্চ উপদেষ্টাদের ‘সেফ এক্সিটের’ পথ দেখালেন আখতার জামায়াতের সঙ্গে জোট বা সমঝোতা করবে না বিএনপি নারীদের জন্য তারেক রহমানের ৬ অঙ্গীকার এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে নিয়ে জনগণ গর্বিত থাকতে চায়: জামায়াত আমির রাজধানীতে আ. লীগের ৭ নেতাকর্মী গ্রেফতার

যে কৌশলে দেশে ফেরার চেষ্টায় আ.লীগ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৩:০১ এএম, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ এখন রাজনৈতিক পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত দলটির নেতারা ভারতে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। নানা কৌশলে ফের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য স্ক্রলে প্রকাশিত এক বিস্তৃত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হাবিবে মিল্লাত ২০২৪ সালের অক্টোবরে ছাত্রদের নেতৃত্বে ঢাকায় শুরু হওয়া গণআন্দোলনের সময় সাত সপ্তাহ ঢাকায় লুকিয়ে ছিলেন। পরে সীমান্ত পেরিয়ে কলকাতায় আশ্রয় নেন তিনি। তার ভাষায়, পালিয়ে যাওয়ার সময় তিনি গাড়ি, মোটরসাইকেল ও হেঁটে ২২ ঘণ্টায় সীমান্ত অতিক্রম করেন। কলকাতায় পৌঁছেও শুরুতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাকে। কোনো অর্থ না থাকায় চার রাত মাটিতে ঘুমাতে হয়েছিল।

হাবিবে মিল্লাত ২০০৭ সালে স্কটল্যান্ডের চিকিৎসা পেশা ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে দেশে ফেরেন। ২০২৪ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য ছিলেন। নির্বাসনে কলকাতায় তিনি স্ত্রীসহ ভাড়া নেয়া এক অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন। সেখানেই তিনি স্ক্রল’কে বলেন, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু তারা কিভাবে সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন তা জানালেন হাবিবে মিল্লাত। তিনি বললেন, গত এক বছরে আমরা অন্তত ৬৩৭টি ঘটনায় আওয়ামী লীগ কর্মীদের জনতার হাতে ‘লিঞ্চড’ (প্রহৃত বা অপদস্ত) হওয়ার তথ্য রেকর্ড করেছি। মোট ১১৬ জন সাবেক এমপি জেলে আছেন।

এমন অভিযোগ তিনি নথিভুক্ত করেন কানাডাভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক গ্লোবাল সেন্টার ফর ডেমোক্রেটিক গভর্নেন্স-এর জন্য। উদ্দেশ্য হলো আওয়ামী লীগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করা। হাবিবে মিল্লাতের হিসেব মতে, প্রায় এক হাজার আওয়ামী লীগ নেতা ভারতে অবস্থান করছেন। তার বেশিরভাগই কলকাতায়। গত মাসে বিবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয় আওয়ামী লীগ কলকাতায় অফিস খুলেছে। তাতে ঢাকায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একে দেশের বিরুদ্ধে ‘স্পষ্ট অবমাননা’ বলে অভিহিত করে। দিল্লি পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় জানায় প্রতিক্রিয়াটি ‘ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে।’

কলকাতায় থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা জোর দিয়ে প্রতিবেদনটি অস্বীকার করেন। হাবিবে মিল্লাত বলেন, আমরা সামাজিক প্রাণী। পাঁচজন একসঙ্গে আড্ডা দিলে তাকে অফিস বলা যায় না।

অফিস থাক বা না থাক, কলকাতার ক্যাফেতে প্রায়ই তারা দেখা করেন, আবার ভার্চুয়াল বৈঠকে সীমান্তপারের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। কেউ কেউ দিল্লি গিয়ে হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎও করছেন। তারা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগেই দেশে ফেরার পরিকল্পনা করছেন।

মিল্লাত আত্মবিশ্বাসী যে, যদি আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়, তবে তাদের সাংগঠনিক শক্তি কাজে লাগিয়ে উল্লেখযোগ্য ভোট পাবে।

কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো একেবারেই চায় না দলটি আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুক। ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি এবং বিএনপি উভয়েই আওয়ামী লীগকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়েছে। ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির সারোয়ার তুষার বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। অন্যদিকে বিএনপির রুহুল কবির রিজভী আওয়ামী লীগের অতীত শাসনকে তুলোধোনা করে এর নেতাদের ‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি’ দাবি করেন।

অন্যদিকে থিঙ্কট্যাঙ্ক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের গবেষক আদিত্য গোদারা মনে করেন, শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনা বা আওয়ামী লীগকে একেবারে নিষিদ্ধ করে রাখা—দুটোর একটিও ভারতের পক্ষে সহজ সিদ্ধান্ত নয়। তিনি বলেন, ভারতের কাছে এখন গুরুত্বপূর্ণ হলো, পরবর্তী যে দলই ক্ষমতায় আসুক, তাদের সঙ্গে ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক বজায় রাখা।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ যদি ফেরে, সেটি সময়সাপেক্ষ হবে। তবে ফেরার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে—এমন ভাবার সুযোগ নেই।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতা ছিল আওয়ামী লীগের মূল ঘাঁটি। পাঁচ দশক পর দলটি আবারও সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। তবে এবার পথ অনেক কঠিন, রাজনীতি অনেক বেশি জটিল। ভারতের কূটনৈতিক ভূমিকা, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ এবং জনমতের পরিবর্তন—সবকিছু মিলিয়ে আওয়ামী লীগের কলকাতা থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসার পথ এখনও অনিশ্চিত।

মন্তব্যঃ

দুঃখিত, কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি!

নতুন মন্তব্য করুন:

ad
সকল খবর জানতে ক্লিক করুন
ad